সফলতার জন্য ডিস্ট্রিবিউটরদের যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন: পর্ব-৫

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিতে সকলেই সাফল্য লাভ করতে পারে না। সাফল্য লাভের জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম, অধ্যয়ন ও অনুশীলন। যে যত বেশি পরিশ্রম করবে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে তত বেশি। যে যত বেশি অধ্যয়ন করবে সে তত বেশি পরিকল্পিত উপায়ে পরিশ্রমকে কাজে লাগাতে পারবে এবং যত বেশি অনুশীলন করবে সে তত বেশি সফলতা অর্জন করবে।
ডিস্ট্রিবিউটরদের ব্যক্তিগত গুণাবলীর উপর তার সফলতা নির্ভর করে। সফলতা লাভের জন্য একজন ডিস্ট্রিবিউটরদের যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তা হলো-


১। আত্মবিশ্বাসঃ
আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান মানুষ যে কোন কাজ সফলভাবে সম্পাদন করতে পারে। কোন কাজ শুরু করার পূর্বেই যারা ফলাফল প্রত্যাশা করে, তারা কখনো সফল হতে পারে না। কথায় আছে, মানুষ যা বিশ্বাস করে তা অর্জন করে। এ বিশ্বাসের পেছনে একাগ্রতা, মেধা ও দৃঢ় মনোবল বিদ্যমান। প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে আত্মবিশ্বাস অন্যতম প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। যিনি বিশ্বাস করেন যে, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ সফলতা অর্জন তার পক্ষে সম্ভব, তিনি অবশ্যই সফলকাম হবেন।

২। ইতিবাচক মনোভাবঃ
ইতিবাচক মনোভাব ব্যতীত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসায় কোন কিছুই অর্জন করা যায় না। নেতিবাচক মানুষ শুরুই করতে চায় না। কারন তারা শুরুর আগেই মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে আসে। অর্থাৎ কেন করব? কেন যাব? কেন পাব? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ আগে জেনে নেয়, শিখে নেয় এবং অনুশীলন করে তারপর এগোয়। সফল ডিস্ট্রিবিউটর হতে হলে চাই ইতিবাচক মনোভাব, জয়ের আকাঙ্খা আর নতুনকে আলিঙ্গন করার মনোবৃত্তি।

৩। দৃঢ় মনোবলঃ
নেটওর্য়াকারদের দৃঢ় মনোবল তাদের সাফল্যের পথ দেখিয়ে দেয়। নিজের কাজের প্রতি আস্থা না থাকলে যে কোন সময় তা বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডিস্ট্রিবিউটরদের দৃঢ় মনোবল ডাউন-লাইন ডিস্ট্রিবিউটরদের কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়ায়। দৃঢ় মনোবলের দরুন মানুষের কোন পরিশ্রমই বৃথা যায়না। প্রাথমিক ফলাফল যাই হোক না কেন, দৃঢ় মনোবলের সহিত কাজ করলে চূড়ান্ত সফলতা একদিন আসবেই। এজন্য প্রত্যেক ডিস্ট্রিবিউটরকে দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হতে হবে।

৪। ধৈর্য্যঃ
ধৈর্য্য মানুষের বড়গুন। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ বিষয়টি সম্পূর্ণ সত্য। যার ধৈর্য্য নেই সে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ টিকে থাকতে পারে না। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং তাৎক্ষণিক ফল লাভের কোন বিষয় নয়। সময়ের সাথে সাথে এ পদ্ধতিতে ফল আসতে শুরু করে। প্রথমত; এটি একটি নতুন মার্কেটিং সিস্টেম এবং অবিশ্বাস্য আয়ের পথ। এজন্য প্রাথমিক অবস্থায় নতুন ক্রেতা (এসপেক্ট) এ পদ্ধতি গ্রহন লাভ করতে পারে। এসময় ডিস্ট্রিবিউটররা অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি ব্যর্থতাকে এক একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে মেনে নিতে হবে। আর এসব অভিজ্ঞতা থেকে শিখে নতুন উদ্যোমে কাজ করতে হবে তবেই সাফল্য অর্জন সম্ভব।

৫। প্রেষণাঃ
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিতে কাউকে বাধ্য করে কিংবা শর্ত প্রদান করে কাজ আদায় করা যায় না বরং প্রেষণার মাধ্যমে কাজের প্রতি অনুরাগী করে তোলা যায়। আর্থিক প্রেষণার চেয়ে অনার্থিক প্রেষণা অনেক বেশি ফলপ্রসু। এজন্য চাই সুন্দর বচনভঙ্গী, আন্তরিকতা ও সহযোগিতা। ডিস্ট্রিবিউটররা নতুনদের কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি বোনাস ও প্রমোশন অর্জনের জন্য প্রেষণা প্রদান করতে হবে। প্রেষিত করার ক্ষমতা যার যত বেশি সফলতা অর্জনের সম্ভাবনাও তার তত বেশি।

৬। সহযোগিতাঃ
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ একের হাত ধরে অন্যের প্রবেশ, একের সহযোগিতায় অন্যেরা এগোয় এবং একের প্রচেষ্টায় অন্যরা সফলতা অর্জন করে। আপ-লাইন কিংবা ডাউন-লাইন প্রত্যেকের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। কারন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিতে একে অন্যের সহযোগিতা ব্যতীত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশের জন্যই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিকে রিলেশনশীপ মার্কেটিং বলা হয়।

৭। সময়জ্ঞানঃ
সময়ের প্রতিটি মূহুর্ত নেটওর্য়াকারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং স্বাধীন ব্যাখ্যা হলেও আজকের কাজ আগামী দিনের জন্য যারা ফেলে রাখে তারা নিজ হাতে ভাগ্যকে দূরে ঠেলে দেয়। ডিস্ট্রিবিউটরদেকে সময়ের প্রতি এতটাই প্রাধান্য দিতে হবে যেন নতুনরা তা অনুসরন করে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ আজকের কাজ আজই করতে হবে, আগামী কালের জন্য যারা অপেক্ষা করে তারা সাফল্যের পথে পিছিয়ে যাবে। এজন্য দেখা যায় পরে জয়েন করেও অনেকেই এগিয়ে যায়। এটি সম্ভব নেটওয়ার্ক মার্কেটিং। কারণ এখানে প্রত্যেকের পারফরমেন্স অনুযায়ী প্রত্যেকে ফল লাভ করে। এজন্য সকল ডিস্ট্রিবিউটরদের সময়জ্ঞান থাকা উচিত।

৮। দায়িত্বশীলতাঃ
সফল হতে হলে ডিস্ট্রিবিউটরদের দায়িত্বশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। ডিস্ট্রিবিউটরদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দায়িত্ব প্রদান করে তা পালন করিয়ে নেয়ার অভ্যাস থাকতে হবে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জীবনের কোন পর্যায়ে পরিশ্রম করে ব্যর্থ হয় না। আবার যাদের দায়িত্ববোধ বেশি তারা কখনো হতাশ হয়না।

৯। উচ্চাকাঙ্খাঃ
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ সফল হওয়ার জন্য উচ্চাকাঙ্খা থাকতে হবে। কারণ উচ্চাকাঙ্খা মানুষের মাঝে তাড়না সৃষ্টি করে লক্ষ্য পূরনের জন্য। ইতিবাচক ডিস্ট্রিবিউটর উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করে মেধা, শ্রম ও সৃজনশীলতা দিয়ে কাঙ্খিত ফল অর্জন করে।

১০। জ্ঞানান্বেষণঃ
অর্থ প্রতিপত্তি আর সম্মানের জন্য জ্ঞানার্জন অপরিহার্য। যে যেই বিষয়ে পারদর্শী সে সেই বিষয়ে সফল হয়, বিষয় ভিত্তিক পারদর্শিতার জন্য প্রয়োজন অধ্যয়ন ও অনুশীলন। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর বিশাল ভান্ডারের আংশিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেও নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করতে পারে যে কোন ডিস্ট্রিবিউটর। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতি বিষয়ে জানতে হলে এ বিষয়ে অধ্যয়ন করতে হবে, বিভিন্ন বই পুস্তক পড়তে হবে এবং বিশ্বের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে।
( চলবে )

No comments:

Post a Comment