প্রতি ১০টি স্ট্রোকের মধ্যে ৯টিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে। আমেরিকায় মৃত্যুর কারণ হিসাবে ৫ নম্বরে রাখা হয়েছে স্ট্রোককে। প্রতিবছর ৮ লাখ আমেরিকান মারা যায় স্ট্রোকে।
দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এই গবেষণার কাজে ২৭ হাজার মানুষের তথ্য নেওয়া হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এ মানুষদের বাছাই করা হয়। সব স্থানে ৯০ শতাংশ স্ট্রোকের জন্য ১০টি কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২টি দেশের ৬ হাজার মানুষের স্ট্রোকের জন্য ১০টি কারণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও ৩২টি দেশের ২০ হাজার রোগীর তথ্য নেওয়া হয়েছে।
বড় দুই ধরনের স্ট্রোক ইসহেমিক স্ট্রোক বলে বিবেচিত হয়। রক্ত জমাট বেঁধে ৮৫ শতাংশের এই স্ট্রোক ঘটে। আরেকটি স্ট্রোক হেমারহেজিক স্ট্রোক। ১৫ শতাংশ মানুষের এই স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি সৃষ্টিকারী মাধ্যমগুলো নির্ণয় কর হয় পপুলেশন অ্যাট্রিবিউটেবল রিস্ক (পিএআর)-এর ভিত্তিতে। এ পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয়, কিভাবে একজন মানুষের স্ট্রোকের ঝুঁকি গোটা জনসংখ্যার ওপর প্রভাববিস্তার করতে পারে।
গবেষকরা বলেন, পিএআর-এর ৪৮ শতাংশ হাইপারটেনশনের কারণে ঘটে থাকে। ৩৬ শতাংশ ঘটে শারীরিকভাবে কোনো কাজ না করার কারণে। আর বাকি ১২ শতাংশ ধূমপানের কারণে এবং ৯ শতাংশ হৃদরোগের কারণে এমন হয়ে থাকে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে ৪ শতাংশ, অ্যালোকোহলের কারণে ৬ শতাংশ, মানসিক চাপে ৬ শতাংশ এবং লিপিডসের কারণে ২৭ শতাংশের স্ট্রোক হয়ে থাকে। এর পেছনে স্থূলতা বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যাও প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে। এদের সবগুলো একাকী স্ট্রোকের পেছনে কাজ করে। আর যদি একত্রিত করা হয়, তবে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ কারণের ক্ষেত্রে পিএআর হয় ৯০ শতাংশ। একই স্থান, বয়স, গোত্র বা নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয়।
হাইপারটেনশনের জন্য উত্তর আমেরিকায় পিএআর ৩৯ শতাংশ। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া পিএআর ৬০ শতাংশ। অ্যালকোহলের কারণে পশ্চিম ইউরোপের পিএআর বেশ কম। তবে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক বেশি। শারীরিক অকর্মন্যতার কারণে চীনের পিএআর সবচেয়ে বেশি।
গবেষক এবং ইনস্টিটিউট অব ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির পপুলেশন হেলথ রিসার্চ বিভাগের প্রফেসর সালিম উইসুফ জানান, বিশ্ব জনসংখ্যার মাঝে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণে ভূমিকা রাখবে এ গবেষণা। স্থানভিত্তিক ঝুঁকি নির্ণয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে এ গবেষণায়। স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা, স্বাস্থ্যকর খাবারের সহজলভ্যতা, তামাক ও তামাকজাত পণ্য এড়িয়ে চলা এবং হাইপারটেনশন এবং ডিসলিপিডেমিয়ার চিকিৎসাব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতি ১০টি স্ট্রোকের মধ্যে ৯টিকেই প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানানো হয়েছে গবেষণায়।
No comments:
Post a Comment