রক্তদানেও বিপদাপন্ন জীবন! জে‌নে নিন কারণ কি?

রক্ত‌দিন, জীবন বাঁচান ।।
রক্তদান নিঃসন্দেহে উত্তম কাজ। প্র‌য়োজনীয় গ্রু‌পের রক্ত পেলেই বেঁচে যায় মুমূর্ষু-প্রাণ৷ তাই অবশ্যই রক্ত দিন। কিন্তু রক্ত দেওয়া বা নেওয়ার সময় সামান্য কিছু ভু‌লে অ‌নেক ক্ষ‌তি হতে পারে। এমন‌কি জীবনও সঙ্কটাপন্ন হ‌তে পা‌রে। বিপদে পড়তে পারেন রক্ত দাতা-গ্রহীতা দুজনেই!
ত‌বে শি‌রোনাম দে‌খে ভয় পা‌বেন না। আমরা সব ক্ষে‌ত্রেই স‌চেতনতা অবলম্বন ক‌রি। তাই রক্তদা‌নের ম‌তো গুরুত্বপূর্ণ বিষ‌য়েও কিছু সতর্কতা দরকার। এ‌তে ক‌রে রক্তদা‌ন ও গ্রহ‌ন প্রশ্ন‌বিদ্ধ হ‌তে পা‌রে না।

আমরা অ‌নে‌কেই মানব সেবায় রক্ত ডো‌নেট ক‌রে থা‌কি। ত‌বে
অনেকেই জানেন না যে, রক্ত দেওয়ার আগে কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখতে হয়! জানেন না, রক্ত দেওয়ার পর দাতার শরীরে কোনও প্রভাব পড়তে পারে কি না! একইভাবে ব্লাড ব্যাঙ্ক কিংবা সরাসরি কোনও ব্যক্তির দেহ থেকে রক্ত নেওয়ার সময়েও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না। এর ফ‌লে সেই জীবনদায়ী রক্তই গ্রহীতার শরীরে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যা ডেকে আনতে পারে মৃত্যুকে!

তাহলে রক্তদান ও গ্রহ‌নে সাবধান থাকতে হবে কিছু বিষয়ে। তো জেনে নেই বিষয়গু‌লো কি কিঃ
রক্ত নেওয়ার আগে কি কি দেখা দরকার?
* গ্রহীতার সঙ্গে দাতার রক্তের গ্রুপের অবশ্যই মিল থাকতে হবে। রক্তের চারটি গ্রুপ রয়েছে। যথা-
১। A (+-),
২। B (+),
৩। AB (+-) এবং
৪। O (+-)।
O গ্রুপের মানুষ যে কোনও গ্রহীতাকে রক্ত দিতে পারেন। এই কারণে এই গ্রুপটিকে সর্বজনীন দাতা বলা হয়। A- গ্রুপের দাতা রক্ত দিতে পারেন A এবং AB গ্রুপকে। গ্রুপ B-র দাতা রক্ত দিতে পারে B এবং AB গ্রুপকে। আর গ্রুপ AB শুধুমাত্র AB গ্রুপের গ্রহীতাকেই রক্ত দিতে পারেন। যদিও বাকি সকল গ্রুপ থেকে রক্ত নিতে পারে AB। এই কারণে গ্রুপ AB-কে সর্বজনীন গ্রহীতা বলা হয়। এছাড়াও রক্তের একটি থার্ড অ্যান্টিজেন রয়েছে যাকে RH ফ্যাক্টর বলা হয়। এই RH ফ্যাক্টর রক্তে উপস্থিত (+) থাকতে পারে অথবা অনুপস্থিত (-) থাকে। সাধারণত RH নেগেটিভ রক্ত RH নেগেটিভ রোগীর শরীরেই দেওয়া হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে RH পজিটিভ বা RH নেগেটিভ- যে কোনও রক্ত RH পজিটিভ রোগীকে দেওয়া যেতে পারে।
* কোনও রোগীকে রক্ত দেওয়ার আগে দাতা এবং গ্রহীতার রক্তের কম্পোসিটের মিল হওয়াও অত্যন্ত জরুরী। গ্রুপ মেলার পরেও গ্রহীতার শরীরের রক্ত যে ধরনের কম্পোসিট চায়, তার সঙ্গে দাতার রক্তের কম্পোসিটের মিল আছে কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে।
* কোনও ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্তের নম্বর খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ‍ কবে সেই রক্তটি নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়টিও খুঁটিয়ে দেখা উচিত।
* পাশাপাশি, ব্লাড ব্যাঙ্কের ওই রক্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ অবশ্যই খেয়াল করা জরুরি। কারণ একটি নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সেই রক্ত নিলে রোগীর শরীরে নেগেটিভ প্রভাব পড়বে।
* রক্তের উপাদানের রূপ অর্থাৎ কম্পোনেন্ট ফর্মও ভাল করে দেখে নিয়ে তবেই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনতে হবে।
* এক জায়গা থেকে অন্যত্র রক্ত নিয়ে যাওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়। সাধারণ ২০-৬০ তাপমাত্রায় রক্ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া উচিত।

ব্লাড ডোনার কী রকম হওয়া চাই:
* দাতার অবশ্যই শরীর সুস্থ থাকা উচিত। অর্থাৎ কোনও বিশেষ শারীরিক সমস্যায় ভুগলে রক্ত দেওয়া উচিত নয়। সেক্ষেত্রে দাতার নিজেরই শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। পাশাপাশি অন্যান্য অসুস্থতার লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
* ১৮ বছরের আগে রক্ত দেওয়া উচিত নয়। তবে ১৬-১৭ বছরে রক্ত দিতে চাইলে অভিভাবকদের অনুমতি এবং সম্পূর্ণ শারীরিক অবস্থা বিচার করে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত দেওয়া যেতে পারে।
* বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী দাতার ওজন সঠিক হওয়া উচিত।
* রক্ত দেওয়ার আগে সম্পূর্ণ মেডিক্যাল চেকআপ করানো উচিত। দাতার রক্ত গ্রহীতার শরীরে প্রবেশ করলে তা নিরাপদ হবে কি না তা যাচাই করতে ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, ভাইরাল হেপাটাইটিসের মতো বেশ কিছু টেস্ট করা হয়। এর ফলে দাতার শরীর থেকে গ্রহীতার শরীরে রক্তের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা রোধ করা যায়।
* রক্ত দেওয়ার আগে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা চেক করিয়ে নিন। তাহলে রক্ত দেওয়ার পর রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) হবে না। একই সঙ্গে নাড়ির স্পন্দন (পালস), ব্লাড প্রেসার এবং দেহের তাপমাত্রা চেক করতে হবে।
* ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং গর্ভবতী মহিলাদের রক্ত না দেওয়ার জন্যই ডাক্তাররা পরামর্শ দেন।

রক্ত দেওয়ার আগে করণীয়ঃ
* আয়রনযুক্ত খাবার খান। এতে রক্ত দেওয়ার পর কোনও শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
শস্যজাতীয় খাদ্য, মাছ, পোলট্রি ডিম, সোয়াবিন খাওয়া ভাল। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার শরীরে আয়রনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে। ফলের রস, আমলকি, পেয়ারা নিয়মিত খেতে হবে।
* নির্দিষ্ট পরিমাণ জল বা ফলের রস খাওয়াও অত্যন্ত জরুরী। সাধারণত রক্ত দেওয়ার পর অনেক সময় রক্তদাতাকে দুর্বল এবং বিবর্ণ লাগে। এর কারণ নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে ব্লাড প্রেসার এবং ব্লাড সুগারের মাত্রা অনেক সময় কমে যায়। এই ধরনের ঝুঁকি এড়ানো তখনই সম্ভব যখন দাতা রক্ত দেওয়ার আগে ভাল করে হাইড্রেটেড হতে পারবেন। রক্ত দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে, বিশেষত গরমকালে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে হয়।
* রক্ত দেওয়ার আগের রাতে যথাযথ ভাবে ঘুমানো জরুরি।
* খালি পেটে রক্ত দেওয়া উচিত নয়। আবার খুব বেশি ভরা পেটেও রক্ত দিতে আসা ঠিক নয়। রক্ত দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে রক্তদাতার ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। সঠিক পরিমাণে খাবার খেলে তা দাতার ব্লাড সুগারের মাত্রাও ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
* রক্ত দেওয়ার এক ঘণ্টা আগে থেকে ধূমপান করা উচিত নয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যালকোহল খাওয়াও ঠিক নয়। একইসঙ্গে রক্ত দেওয়ার আগে চুইংগাম, ক্যান্ডি বা মিন্ট জাতীয় কিছু না খাওয়াই উচিত। কারণ এগুলি মুখের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

কতদিন পর পর রক্ত দেওয়া যায়?
একবার রক্ত দেওয়ার পর অন্তত আট সপ্তাহ (৫৬ দিন) বাদে ফের রক্তদান করা যায়। ডবল রেড সেল ডোনেশনের মধ্যে ১৬ সপ্তাহ (১১২ দিন) অপেক্ষা করা উচিত। ত‌বে তিন মাস পর পর রক্তদান করাই উত্তম।

রক্ত দাতা-গ্রহীতার সতর্কতাঃ
রক্ত দেওয়া এবং নেওয়ার আগে দাতা-গ্রহীতাকে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং টেস্টগুলি করিয়ে নিতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে যাতে দাতার শরীর থেকে কোনও রোগ রক্তের মাধ্যমে গ্রহীতার শরীরে বাহিত না হয়। কেউ যদি রক্ত দেওয়ার পর জানতে পারেন যে তাঁর শরীরে এইচআইভি রয়েছে তাহলে তিনি নির্দিষ্ট ব্লাড ডোনেশনের হেল্পলাইন কিংবা নির্দিষ্ট চিকিৎসককে অবশ্যই জানান।


^
^
#রক্তদান । @Blood, #Blood-Bank, #Blood-Donation, রক্তদা‌নে প্র‌য়োজনীয় তথ্য, #Blood-Group

No comments:

Post a Comment