অ্যাসিডিটির চিকিৎসা: ১২টি ঘরোয়া সমাধান

অ্যা‌সি‌ডি‌টি মানব শরীরের জন্য বি‌ভী‌ষিকাময় এক নাম। পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক গ্ল্যান্ড থেকে যখন অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরিত হয় তখনই মূলত অ্যাসিডিটি তৈরি হয়। এর ফলে পেটে গ্যাস উৎপাদন, দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস, পেট ব্যথা এবং আরো অনেক লক্ষণ দেখা যায়।
সাধারণত খাবার গ্রহণে অনিয়ম, না খেয়ে থাকা, বাই‌রের খাবার বা তেল-চ‌র্বিযুক্ত ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চা, কফি পান বা ধূমপান ও মদপানের কারণে অ্যাসিডিটি হয়।

অ্যা‌সি‌ডি‌টির র‌য়ে‌ছে নানান রকম সমস্যা বা উপসর্গ।  এর ফলে প্রধানত
বুকে জ্বালাপোড়া এবং খাবার খাওয়ার সময় গলা দিয়ে অ্যাসিড উদগীরণের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
স‌চেতনতা আর স‌হিষ্ণুতা পা‌রে অ্যা‌সি‌ডি‌টিকে দূ‌রে রাখ‌তে। এখানে তাই অ্যাসিডিটি নিরাম‌য়ের সহজ ১২টি ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতির বিবরণ দেয়া হ‌লোঃ

১. তুলসী পাতা
তুলসী পাতার শীতল এবং বায়ুনাশকারী উপাদান আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাসিডিটির ফলে সৃষ্ট যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে। অ্যাসিডিটির লক্ষণ দেখা গেলে; সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকটি তুলসী পাতা খেয়ে নিন। অথবা ৩-৪টি তুলসী পাতা এক কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং কয়েক মিনিট ধরে সিদ্ধ হতে দিন। এরপর পানিটুকু চুমুক দিয়ে খেয়ে ফেলুন।

২. ফিনেল টি
প্রতিবেলা খাবার গ্রহণের পর অ্যাসিডিটি থেকে রেহাই পেতে ফিনেল চা বীজ চিবিয়ে খেতে পারেন। ফিনেল চা বদহজম এবং পেট ফাঁপার চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ফিনেল বীজের নির্যাস থেকে যে তেল বের হয় তা এ ক্ষেত্রে খুবই উপকারী।

৩. দারুচিনি
দারু‌চি‌নি নামক মসলাটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে। এটি হজম প্রক্রিয়া ও শোষণক্রিয়া শক্তিশালী করে পাকস্থলীর সমস্যা দূর করবে। পাকস্থলীর নালীগুলোর ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে দারুচিনির চা পান করুন।

৪. মাখন তোলা দুধ বা ঘোল
ভারী বা মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার পর অ্যান্টাসিড না খেয়ে বরং একগ্লাস ঘোল পান করুন। এতে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা পাকস্থলীর অ্যাসিডিটিকে স্বাভাবিক করে আনে। এর সঙ্গে কয়েকটি গোল মরিচ বা ১ চা চামচ ধনে পাতা মিশিয়ে দিলে আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে।

৫. গুড়
খাবারের পর বয়ো-বৃদ্ধরা কেন গুড় খান তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? গুড়ে রয়েছে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেশিয়াম উপাদান যা পাকস্থলীর কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করে। এটি হজম প্রক্রিয়ায়ও সহায়তা করে। আর হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করার মাধ্যমে পাকস্থলীকে অ্যাসিড মুক্ত করে। এ ছাড়া দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা এবং পাকস্থলীকে ঠাণ্ডা করার কাজও করে গুড়।

৬. লবঙ্গ
হজমজনিত বিশৃঙ্খলার চিকিৎসায় ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা শাস্ত্র এবং আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে লবঙ্গের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। লবঙ্গ বায়ুনাশকারী। ফলে এটি পাকস্থলীতে গ্যাস নির্গমণে বাধা দেয়। লবঙ্গ ও এলাচ গুঁড়া খেলে নিশ্বাসের দুর্গন্ধও দূর হয়।

৭. জিরা বীজ
জিরা বীজ অ্যাসিড প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে। হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক এবং পাকস্থলীর ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। ভাজা জিরা বীজ চূর্ণ করে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে অথবা এক কাপ সেদ্ধ পানিতে ১ চা চামচ জিরা বীজ মিশিয়ে প্রতিবেলা খাবারের পর পান করুন।

৮. আদা
আদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে হজমে সহায়ক এবং প্রদাহরোধী উপাদান। পাকস্থলীর অ্যাসিড দূরীকরণে এক ফালি তাজা আদা চিবিয়ে খান। অথবা প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এক চামচ করে আদার রস খান। অথবা এককাপ ফুটন্ত পানিতে তাজা আদা সেদ্ধ করে পানিটুকু পান করুন।

৯. ঠাণ্ডা দুধ
ল্যাকটোজ গ্রহণে যাদের কোনো সমস্যা হয় না তাদের পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড দূর করতে দুধ খুবই কার্যকর ভুমিকা পালন করতে পারে। দুধ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। যা পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরিতে বাধা দেয়। সুতরাং পরেরবার অ্যাসিডিটিতে আক্রান্ত হলে একগ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করুন।

১০. আপেল সুরা ভিনেগার
অনেক সময় পাকস্থলীতে স্বল্প অ্যাসিডিটির ফলেও সমস্যা দেখা দেয়। আর এ ক্ষেত্রে আপেলের সুরা থেকে তৈরি ভিনেগার কাজে লাগে। ১-২ চা চামচ অপরিশোধিত এবং অপরিশুদ্ধ আপেল সুরা ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার বা দুইবার পান করুন। এ ছাড়া এক টেবিল চামচ আপেল সুরা ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন।

১১. নারকেলের পানি
নারকেলের পানি দেহে পিএইচ অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে আনে। এ ছাড়া নারকেলের পানি পাকস্থলীতে শ্লেষ্মা তৈরিতেও কাজ করে। শ্লেষ্মা পাকস্থলীকে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আর এটি আঁশসমৃদ্ধ হওয়ার কারণে হজম প্রক্রিয়ায়ও সহায়তা করে এবং পুনরায় অ্যাসিডিটির হাত থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে।

১২. কলা
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড। অ্যাসিডিটি থেকে রেহাই পেতে এটি সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া টোটকা। প্রতিদিনি অন্তত একটি কলা খান। তাহলে অ্যাসিডিটির কুপ্রভাব থেকে রেহাই পাবেন।

^
^
#অ্যাসিডিটি , #ঘরোয়া #চিকিৎসা, @অ্যাসিডিটির চিকিৎসা

No comments:

Post a Comment