মৌ‌খিক পরীক্ষায় হীনম্মন্যতা বা অতি আত্মবিশ্বাস নয়

প্রথম আ‌লো: যারা বিসিএস সহ বি‌ভিন্ন মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন বা ভাইভা বো‌র্ডে যাবেন। তাঁদের জন্য পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তটা হলো পরীক্ষা প্রস্তুতির শেষ মুহূর্ত। পরীক্ষা যত কাছে, চাকরি তত কাছে। গত লেখাটির পর ভাইভা নিয়ে আরও কিছু কথা বলছি।


এক. আপনার ভাইভার ডেটের আগের পাঁচ-ছয় দিনের দুটি ইংরেজি আর দুটি বাংলা পেপারে চোখ রাখবেন। ভাইভার দিন সকালে একটা ইংরেজি ও একটা বাংলা পেপার দেখে যাবেন।
দুই. কিছু বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। সেগুলোর প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রাখলে ভালো হয়। যেমন, আপনার বস আপনাকে অবৈধ কাজের নির্দেশ দিলে আপনি কী করবেন—এই জাতীয়।
তিন. আপনি সিভিল সার্ভিসের জন্য অপরিহার্য নন, এটা মাথায় রেখে ভাইভা দিতে যাবেন। আপনার একাডেমিক রেজাল্ট, আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—এ রকম অতীতের বিষয়গুলোর গুরুত্ব অতি সামান্যই। ভাইভা বোর্ডে শুধু ‘আপনি কী’, সেটা দেখা হবে। নিজেকে চাকরির জন্য যোগ্য প্রমাণ করুন।
চার. আপনার রাজনৈতিক অবস্থান যেন কোনোভাবেই আপনার কথায় বোঝা না যায়।
পাঁচ. বোর্ডের স্যাররা যেমনই থাকুন না কেন, আপনি নিজে সব সময়ই খুব ফরমাল থাকবেন। কোনো প্রশ্ন বুঝতে না পারলে, খুবই বিনীতভাবে ‘আই বেগ ইয়োর পার্ডন, স্যার/ ম্যাডাম’ বলে সেটি আরেকবার জিজ্ঞেস করার জন্য অনুরোধ করুন। আপনার হাঁচি দেওয়ার ধরনেও আপনি কতটুকু অফিসারসুলভ ফরমাল, সেটি প্রকাশ পায়।
ছয়. আপনার ক্যাডারের ফার্স্ট ও সেকেন্ড পছন্দ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পড়াশোনা করুন। আপনার জেলা সম্পর্কে জেলা তথ্য বাতায়ন থেকে জেনে নিন। অনলাইনে পড়াশোনা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দু-একটি প্রামাণ্য বই উল্টেপাল্টে দেখতে পারেন।
সাত. প্রফেশনাল ক্যাডারের ক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাডেমিক সাবজেক্টের বেসিক নলেজ এবং কিছু প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখবেন।
আট. আপনার ভাইভার ডেটের আগে বাজারে অনেক ছোট ছোট নোট টাইপের বইপত্র পাবেন। সেগুলো নাড়াচাড়া করে দেখতে পারেন। তবে ওসব বই থেকে কমন আসে খুব কমই। আসলে ভাইভাতে কী জিজ্ঞেস করা হবে, কী জিজ্ঞেস করা হবে না, এর কোনো নিয়ম নেই।
নয়. ভাইভাতে মার্কস দেওয়া হয় ওভার অল পারফরম্যান্সের ওপর, এখানে কোনো ধরনের সেগমেন্টেড মার্কিং হয় না। যারা ভাইভাতে থাকবেন, তাঁদের প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা মার্কস দেবেন, পরে সেগুলোকে গড় করা হবে।
দশ. আপনি কয়টা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন, কয়টা পারলেন না; আপনাকে কত সময় ওখানে রাখা হলো—এসব ব্যাপার অতটা মুখ্য নয়, যতটা মনে করা হয়। আপনি কী বললেন, সেটার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি কীভাবে বললেন, সেটা। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি অফিসারসুলভ কি না, সেটি যাচাই করে দেখা হবে।
এগারো. ভাইভা বোর্ডে বিভিন্ন প্রশ্ন করে এবং পরিস্থিতি তৈরি করে আপনার জ্ঞান, ব্যক্তিত্ব, উপস্থিত বুদ্ধি, উপস্থাপন কৌশল, পরিস্থিতি সামলানোর দক্ষতা, ভদ্রতা, আনুগত্য, স্বচ্ছ চিন্তাভাবনার ক্ষমতা, মানসিক পরিপক্বতা—এসব বিষয়ে ধারণা নেওয়া হবে। আগে থেকেই এসব ব্যাপারে প্রস্তুতি রাখুন। আপনার শারীরিক ভাষার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
বারো. ‘আমি না বুঝে এ রকম একটা পছন্দক্রম দিয়েছি’—এ ধরনের উত্তর আপনার সিদ্ধান্তহীনতার পরিচয় দেয়। আপনার প্রথম পছন্দ যা-ই হোক না কেন, আপনার কাজ হলো, আপনি কেন ওই ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি, সেটি আপনার উত্তর দেওয়ার ধরনে পুরোপুরি তুলে ধরা। কোনো প্রকারের হীনম্মন্যতা কিংবা অতি আত্মবিশ্বাস আপনার ভাইভাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
তেরো. আপনি উত্তর দেওয়ার সময় যদি দেখেন স্যাররা অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগী, তবে কোনোভাবেই এটা ভাববেন না যে ওনারা আপনার উত্তর শুনছেন না। সাবধানে উত্তর দিন।
চৌদ্দ. ভাইভা বোর্ডে আপনার সঙ্গে যে রকম আচরণই করা হোক না কেন, সেটিকে কোনোভাবেই পারসনালি নেবেন না। আপনাকে যাচাই করার জন্য কিছু আপাত অস্বাভাবিক আচরণ করা হতেই পারে।
পনেরো. বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনার যা যা জানা প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে ধারণা রাখবেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান স্যারের ‘নাগরিকদের জানা ভালো’ বইটি পড়ে যেতে পারেন।
ষোলো. যেসব চাকরি করলে ভাইভা বোর্ডে যাওয়ার সময় ছাড়পত্র/ অনাপত্তিপত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়, কিন্তু সেই চাকরিটির কথা ফরমে উল্লেখ করা হয়নি, সেই চাকরির কথা ভাইভা বোর্ডে না বললেই ভালো। প্রাইভেট জবের কথা বোর্ডে বলা যায়।
সতেরো. যদি পরপর দু-তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন, তবে ওই মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তা কিংবা আপনার প্রিয়জনের কথা মনে করুন। এটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
আঠারো. ‘আপনি এত দিন কী করেছেন?’ এটির উত্তরে ‘টিউশনি করেছি আর বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি’ কিংবা ‘কোনো স্কুলে শিক্ষকতা করছি’—এ ধরনের উত্তরে কোনো সমস্যাই নেই। আপনি যে অবস্থানেরই হোন না কেন, সেটিকেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে তুলে ধরুন।
উনিশ. আপনি যে রকম, সেটাকেই মার্জিতভাবে উপস্থাপন করুন। আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয় কিংবা আপনাকে আপনার মতো থাকতে দেয় না, এমন কিছু করবেন না৷
বিশ. কথা বলার সময় পারিপার্শ্বিকতার দিকে বেশি খেয়াল না রেখে আপনি কী বলছেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
একুশ. আপনাকে কী প্রশ্ন করা হবে, কী করা হবে না, সেটি নির্ভর করে আপনাকে দেখে স্যারদের মনে কী ইম্প্রেশন তৈরি হলো, সেটির ওপর। নিজেকে খুবই পরিশীলিতভাবে উপস্থাপন করুন।
বাইশ. আপনি আপনার কাজের প্রতি আন্তরিক, অনুগত, দায়িত্বশীল—এই ভাবটি ফুটিয়ে তুলুন।
তেইশ. ভাইভা দিতে যাওয়ার সময় কিংবা ভাইভা দিতে ঢোকার আগমুহূর্তে ভাইভা নিয়ে পড়াশোনা না করাই ভালো। এতে অনেক সময়ই অহেতুক নার্ভাসনেস বাড়ে।
চব্বিশ. আপনি কোনোভাবেই আপনার বসের চাইতে স্মার্ট নন। বসের সঙ্গে কোনো মান-অভিমান করা যাবে না—এ দুই ব্যাপার মাথায় রেখে ভাইভা দিন।
পঁচিশ. কী জানেন না, সেটা নিয়ে কম ভাবুন। হয়তো আপনাকে সেটি জিজ্ঞেসই করা হবে না।
ছাব্বিশ. আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় এবং আপনি বিদায় নেওয়ার সময় আপনার সম্পর্কে ধারণা জন্মে। ঢোকার সময় হাসিমুখে সালাম এবং বের হয়ে যাওয়ার সময় হাসিমুখে ধন্যবাদ ও সালাম দিতে ভুলে যাবেন না।

লিখিত পরীক্ষায় আপনার মার্কস ভালো হলে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ভাইভায় কে কতটা ভালো করবেন, সেটা সম্পূর্ণই নির্ভর করে ভাইভার সেই কয়েক মিনিটের ওপর। নিয়মিত চেষ্টা করে যান, নিজের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখুন। জয় আপনার হবেই হবে!
আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

^
^
#চাক‌রি , @ভাইভা #প্রস্তু‌তি #সাক্ষাৎকার, #হীনম্মন্যতা , @অতি আত্মবিশ্বাস , #ভাইভা বোর্ড, #পরীক্ষার আ‌গে , #বি‌সিএস

No comments:

Post a Comment