সস্তা পোশাক বেচে শীর্ষ ধনী

সস্তা পোশাক বেচে শীর্ষ ধনী (সেরা পাঁচ ব্যক্তি ও পরিবার)

কোন ব্যবসায়ে বা শিল্পে ভাগ্য গড়া সহজ এবং খুব দ্রুত কোনো দেশ বা অঞ্চলের সেরা ধনী হয়ে ওঠা যায়? এমন প্রশ্ন শুনে আপনার মনে সম্ভবত আজকালকার দিনের প্রবল সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি ও তেলের ব্যবসার কথাই ভেসে উঠবে।
আর কেউ যদি তুলনামূলক সস্তায় বাজারে ফাস্ট ফ্যাশন বা দ্রুত নিত্যনতুন নকশার পোশাকের ব্যবসার কথা বলেন, তাহলে হয়তো অনেকের মতো আপনার মনেও খটকা লেগে যেতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, পোশাকের ব্যবসা করে কিছু ব্যক্তি ও পরিবার শুধু নিজ দেশ বা অঞ্চলই নয়, বরং গোটা পৃথিবীরও সেরা ধনীদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

যেহেতু সব সময়ই মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ প্রয়োজন হয়, সেহেতু পণ্যটি বিক্রি হবে, এটি একটি সাধারণ যুক্তি। দাম মোটামুটি কম করে ধরলে যে বিক্রি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়, সেটিও জানা কথা। কিন্তু কম দামে নিত্যনতুন বা হালফ্যাশনের পোশাক বিক্রি করেও যে বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় নাম ওঠানো যায়, সেটি প্রমাণ করেছেন কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। কোয়ার্টজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি এ রকম একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।

১| তালিকায় নাম আসা স্পেনের আন্তর্জাতিক ফাস্ট ফ্যাশন ব্র্যান্ড জারার মূল কোম্পানি ইনডিটেক্সের প্রতিষ্ঠাতা অ্যামানসিও ওর্তেগা এখন শুধু নিজ দেশেই নন, বরং ইউরোপের এক নম্বর ও বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। ফোর্বস-এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এই পোশাক ব্যবসায়ীর মোট সম্পদের মূল্য ৭ হাজার ৫৩০ কোটি মার্কিন ডলার। এমনকি গত বছর অল্প সময়ের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিল গেটসকে টপকে শীর্ষ ধনী হন।

২| বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস-এর তথ্য অনুযায়ী সুইডেনের এইচঅ্যান্ডএমের মালিক স্টেফানের মোট সম্পদের মূল্য এখন ২ হাজার ২০ কোটি ডলার। বদৌলতে তিনি এখন সারা বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় ৩২তম। স্টেফান পারসনের পিতা ১৯৪৭ সালে এইচঅ্যান্ডএম নামের পারিবারিক ব্যবসাটি শুরু করেন।

৩| জাপানে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্পবাণিজ্য বলতে প্রথমেই তো উঠে আসে গাড়ি ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের নাম। কারণ, যুগ যুগ ধরে জাপানি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও বাজার রয়েছে। অথচ এই দেশের শীর্ষ ধনী পোশাক ব্র্যান্ড ইউনিক্লোর মূল প্রতিষ্ঠান ফাস্ট রিটেইলিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাদাশি ইয়ানাই ও তাঁর পরিবার। গত বছর তাঁর সম্পদের মূল্য ৪৮০ কোটি ডলার কমার পরও ১ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার নিয়ে তিনি এখন সেই দেশের সেরা ধনী। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান জে ব্র্যান্ড ও থিওরি অ্যান্ড জিইউও তাঁর ধনাঢ্য ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার পেছনে বেশ কাজ করেছে।

৪| নেদারল্যান্ডসের ফাস্ট ফ্যাশন বা পোশাক ব্র্যান্ড সিঅ্যান্ডএ ভাগ্য বদলে দিয়েছে সেই দেশের ব্রেনিনকমেইজার পরিবারের। এই ডাচ পরিবার অতীতে কখনোই তাদের আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে ২০১২ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন পরিবারটির ধনসম্পদের একটি প্রাক্কলিত মূল্য প্রকাশ করে। সে অনুযায়ী ব্রেনিনকমেইজার পরিবারের সম্পদমূল্য ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি ডলার। এই তথ্য
অবশ্য কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়নি। ১৭৫ বছর আগে ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি সিঅ্যান্ডএর মালিক পরিবারটি এখন সেই দেশের সবচেয়ে ধনী।

৫| আট বছর ধরে আয়ারল্যান্ডের শীর্ষ ধনী হয়েছেন হিলারি ওয়েস্টন ও তাঁর পরিবার। পরিবারটি বিখ্যাত ডিপার্টমেন্ট স্টোর সেলফ্রিজেস ও থমাস লাক্সারির মালিক। তবে তাদের আয়ের বড় অংশই আসে রিটেইল পোশাক ব্র্যান্ড প্রাইমার্ক থেকে, যেটি ওই পরিবারকে সেই দেশের সবচেয়ে ধনীর আসনে বসিয়েছে। সানডে টাইমস-এর তথ্যমতে, হিলারি ওয়েস্টনের বর্তমান সম্পদের মূল্য ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার, যা তাঁর ঠিক পেছনেই থাকা, অর্থাৎ আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় সেরা ধনী ব্যক্তির তুলনায় তিন গুণ বেশি।

এসব ব্র্যান্ডের সফলতার একটি দিক হলো তারা খুব কম সময়ের মধ্যেই নিত্যনতুন নকশার পোশাক নিয়ে আসে এবং বিক্রিও করে থাকে তুলনামূলক কম দামে। ফলে বাজারের প্রতিযোগিতায় তারা অনায়াসেই এগিয়ে যায়। এ ছাড়া তারা পোশাক আমদানি করে সেই সব দেশ থেকে, যেখানে শ্রমিকের মজুরি খুবই নগণ্য। স্বভাবতই এ ধরনের দেশের পোশাকের দামও হয় অনেক কম। পোশাকশ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়ার জন্য অবশ্য রপ্তানিকারক দেশের উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি এসব আমদানিকারক ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

কম দামে পোশাক বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো তারা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুবিধা নেওয়ার প্রতি বেশ মনোযোগী থাকে। যেমন  ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে খুব দ্রুতই হালফ্যাশনের পোশাক ও এ-সংক্রান্ত তথ্য দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ভোক্তাদের মনেও দোলা দিয়ে যায়। অর্থাৎ নতুনত্বের আবাহনে ভোক্তারা দ্রুত সাড়া দেন। এর মানে বাজারে নিত্যনতুন পণ্য তথা পোশাক এলে তাঁরা সেটি লুফে নেন। কারণ, তাঁদের ধারণা, এসব ব্র্যান্ড সব সময়ই নতুন পোশাক নিয়ে আসে।

© Prothomalo

No comments:

Post a Comment